নবীগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ নবীগঞ্জে নীজ চৌকি গ্রামে ওয়ারিশান বিহীন বিক্রেতার নামে দলিল নিয়ে তোলপাড় চলছে।জাল দলিলে রেকর্ড মালিকানার দাবিকে নজিরবিহীন জালিয়াতি হিসেবে অভিহিত করেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। এনিয়ে একটি দরখাস্ত মামলার প্রতিবেদন গত ১৮ জুন আদালতে প্রেরণ করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহীন দেলোয়ার। এনিয়ে গত ৮ জুলাই শুনানী শেষে আদালত প্রতিবেদনটি নথিতে সংযুক্ত করেন। অভিযোগ সূত্রে প্রকাশ,উপজেলার বাউশা ইউনিয়নের নিজ চৌকি মৌজার জেএল নং ১৫৩,খতিয়ান নং ২২০ দাগ নং ১৭৯ হালদাগ ১৮৫ এর এসএ সূত্রে মালিক আয়মনা বিবি।জমির মোট মোয়াজি ১৩ শতক।স্থানীয় ইউনিয়ন অফিসের ওয়ারিশান মূলে আয়মনা বিবির দুই সন্তান হলেন, আব্দুল মন্নান ও জয়ফর বিবি। আব্দুল মন্নানের দলিল মূলে বিক্রিত নিজ গ্রামের ছাইম উল্যার ওয়ারিশানের নিকট ৭ শতক ভূমি ১৯৮১ সালের ২১ মার্চ ক্রয় করেন একই গ্রামের আব্দুল বারিক। আয়মনা বিবির অপর ওয়ারিশান জয়ফর বিবির নিকট থেকে ১৯৯৭ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ৪৯১৩ নং দলিল মূলে আরও ৩ শতক ২৫ পয়েন্ট জমি ক্রয় করেন বারিক মিয়া। মোট মোয়াজির ১৩ শতক জমি থেকে ১০ শতক ক্রয় করে বিগত ৩০ বছর ধরে গৃহ নির্মাণ করে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন তিনি। সম্প্রতি নিজের গৃহ সংস্কার কাজ শুরু করলে পার্শ্ববর্তী বাসিন্দা মৃত শাহাবুদ্দিনের স্ত্রী আমিনা বিবির পুত্র রুকন মিয়া তার মায়ের স্বত্ব দাবি করে একটি দরখাস্ত মামলা করেন। মামলা নং ৫৪০/২০২৫।আদালত তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য নবীগঞ্জ সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাছে প্রেরণ করেন। স্থানীয় তহশীলদার তোফাজ্জল ইসলাম নালিশা ভূমির সার্বিক অবস্থান যাচাই করে প্রতিবেদন দেন। প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও যাচাই ক্রমে অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে প্রেরণ সহকারী কমিশনার শাহীন দেলোয়ার। গত ৮ জুলাই এর উপর শুনানী হলে আদালত প্রতিবেদনটি নথির সাথে সংযুক্ত করে ২৮ জুলাই শুনানীর জন্য নির্ধারন করেন। ১৮ মে দরখাস্ত মামলার প্রেক্ষিতে পুলিশ উভয়পক্ষকে নোটিশ দেয়। পরে বাদী পক্ষকে ফোনের পর ফোন দিয়ে আতংক তৈরী করে থানায় বেআইনী ভাবে এএসআই ছানোয়ার সালিশ বৈঠকের আয়োজন করেন। বাদী আদালতে দায়েরকৃত দরখাস্ত মামলায় এসএ মালিক আয়মনা বিবির মোট মোয়াজি দাগ,খতিয়ান.আরএস মূলে ১৩ শতক ভূমির তথ্য দাখিল করেন।সালিশ বিচারে দরখাস্তের ভিত্তিতে কথিত ক্রেতা আয়মনা বিবির দলিল যাচাই করে বিক্রেতা হিসেবে নিজ চৌকি গ্রামের সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর পুত্র মাজহারুল ইসলাম চৌধুরীর নাম দেখা যায়। বাস্তবে দরখাস্ত মামলায় দাখিলীয় নালিশা ভূমির সাথে ওয়ারিশান মূলে ওই দলিলের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এসময় কথিত ক্রেতা আমিনা বিবির দলিলটি জাল মর্মে সনাক্ত হয়। পুলিশের গোল ঘরে সালিশ বৈঠকে উপস্থিতি বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা বিষয়টি এসিল্যান্ড এবং তহশীলদারের সিদ্ধান্তকে চুড়ান্ত মর্মে সিদ্ধান্ত দেন। এছাড়াও পুলিশের এখতিয়ার বহির্ভূত সালিশ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। যা থানার সিসি ক্যামেরা এবং অনেকের ব্যাক্তিগত মোবাইল ফোনেও সংরক্ষিত রয়েছে। এসময় এএসআই ছানোয়ারও বিষয়টি সহাকরী কমিশনারের দায়িত্ব হিসেবে স্বীকার করেন। এরপরও একাধিক সালিশ বৈঠকে ওয়ারিশান বিহীন বিক্রেতা মাজহারুল চৌধুরীর দলিলকে জাল হিসেবে সনাক্ত করা হয়। ওদিকে,দরখাস্তে দাবিকৃত ৬ শতকের মধ্যে বাদীর ৪ শতক ২৫ পয়েন্টের ভোগ দখল নিয়ে পুলিশ নিরব থাকলেও বারিক মিয়ার এসএ মালিকানায় ওয়ারিশান সূত্রে ক্রয়কৃত ২ শতক ভূমি নিয়ে নাটকীয়তা তৈরী করে। বিবাদীদের ভয়ভীতি দেখায়।পুলিশ সহকারী কমিশনার ও তহশীলদারের প্রতিবেদন আমলে নিতে নারাজ। গত ৮ জুলাই দরখাস্ত মামলার নথিযুক্ত প্রতিবেদন নিয়ে আগামী ২৮ জুলাই শুনানীর জন্য রাখা হলেও গৃহ সংষ্কারে কোন প্রকার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেননি আদালত। এনিয়ে পুলিশকেও কোন নির্দেশনা দেয়া হয়নি। গতকাল বারিক মিয়ার ভূমিতে গৃহের নির্মাণ কাজ চলাকালে পুলিশ গিয়ে শ্রমিকদের মামলাসহ বিভিন্ন হুমকি দিয়ে ভীতিকর পরিবেশ তৈরী করে। এনিয়ে জানতে চাইলে এসআই রিপন চন্দ্র বলেন,এ বিষয়ে ওসি সাহেবকে জিজ্ঞেস করেন। ওসি শেখ কামরুজ্জমানকে মোবাইল ফোনে বিস্তারিত জানিয়ে পুলিশের দুর্ব্যবহারের প্রতিকার চাওয়া হলে তিনি বলেন,শুনেছি ওখানে মারামারি হয়েছে। বাদীর সাথে পুলিশের সখ্যতা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমি বিষয়টি দেখছি। এলাকার সাধারন মানুষের প্রশ্ন দরখাস্ত মামলার প্রতিবেদন দিবেন সহকারী কমিশনার। আদলত গ্রহণ না করলে পরবর্তী নির্দেশ দিবেন। যেভাবে পুলিশ আদালতে চার্জশীট দাখিলের পর বাদী পক্ষকে আর কিছু করার থাকেনা এটাই আইনের বিধান। পরবর্তী করুনীয় আদালতই নির্ধারন করেন।
Leave a Reply