স্টাফ রিপোর্টার ॥ একসময় মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় নিজের মাকে হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন কনু মিয়া। এরপর আদালতের সাজার কোনো রায় ছাড়াই টানা তিন দশক কেটেছে কারাগারে। দুই দশক আগে মামলার কার্যক্রম স্থগিত হলেও মুক্তি মেলেনি তার। অবশেষে জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তার নজরে এলে শুরু হয় আইনি তৎপরতা। আদালতের নির্দেশে দীর্ঘ ৩০ বছরের বন্দিজীবনের অবসান ঘটে কনু মিয়ার। মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) দুপুরে হবিগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। মুক্তি পাওয়া কনু মিয়ার বয়স এখন ৫০ বছর। তার বাড়ি হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার সিংহগ্রামে। বাবার নাম চিনি মিয়া (মৃত)। সরেজমিনে কনু মিয়ার বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, মাত্র চার শতক জমির ওপর ছোট চারটি টিনের ঘরে তার তিন ভাই পরিবার নিয়ে গাদাগাদি করে থাকেন। বাড়ির উঠানে বসে থাকা কনু মিয়ার পাশে হাতপাখা করছেন ভাতিজি জোসনা বেগম। আশপাশের লোকজনও ফিরে পাওয়া স্বজনকে ঘিরে কথা বলছেন। দুই মায়ের ঘরে সাত ভাই বোনের মধ্যে কনু মিয়া ষষ্ঠজন। দরিদ্রতা কারণে পরিবার তার চিকিৎসাও করাতে পারেনি। এখনও মাঝে মধ্যে অসংলগ্ন কথা বলেন কনু। পরিবার বলছে, চিকিৎসা প্রয়োজন, কিন্তু সামর্থ্য নেই। বড় ভাই নসু মিয়া জানান, কনু ঢাকায় কাজ করত, তখন বয়স ২৫। জ্বরে অসুস্থ হয়ে পড়েন এক সময়। পরে তার মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। এরপর কাজ ছেড়ে বাড়ি ফেরেন কনু। ১৯৯৫ সালের ২৫ মে হঠাৎ ঘরে ঢুকে মায়ের গলায় কোদাল দিয়ে কোপ দেন তিনি। হাসপাতালে নেওয়ার পথে মা মারা যান। পরে পুলিশ তাকে আটক করে। তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে তখন কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি। পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে। প্রথমে সিলেট, পরে হবিগঞ্জ কারাগারে রাখা হয় কনু মিয়াকে। কারাগারে যাওয়ার দশ বছর পর এক মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দির মাধ্যমে তারা জানতে পারেন কনু জীবিত। বিশ বছর পর তারা ভাইকে একবার দেখে এসেছিলেন। উল্লেখ্য, কনু মিয়ার জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন নেই। স্থানীয়রা পরিচয়পত্র ও সরকারি ভাতা দাবির পাশাপাশি তার জন্য রাষ্ট্রীয় সহায়তা ও মানবিক সহযোগিতা চান।
Leave a Reply