স্টাফ রিপোর্টার ॥ নারী উদ্যোক্তাদের মার্কেট-গণশৌচাগার কিছুই বাদ যায়নি আওয়ামী লীগ নেতার শ্যোন দৃষ্টি থেকে। দীর্ঘদিন থেকে নিজের দখলে রেখেছেন। ক্ষমতার দাপদে সবকিছু নিজেদের আয়ত্তে রেখেছেন বছরের পর বছর। দীর্ঘদিন ছোট ভাই চেয়ারম্যান ছিলেন, পরে চেয়ারম্যান হন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি। ক্ষমতার দাপটের কারণে এসব দখলের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পায়নি কেউ। তবে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা জানিয়েছেন, নারী উদ্যোক্তা কেউ তিনি বা এর পূর্বে তার ভাইয়ের কাছে কেউ আসেনি। ১৫ বছর ধরে স্থানীয়রা এসব জায়গা দখল করে ব্যবসা করছে।
অভিযোগ উঠেছে, আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কাকাইলছেও এলাকায় দোর্দণ্ড প্রভাব রয়েছে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি ভূঁইয়া পরিবারের। দলীয় ও পর্যাপ্ত অর্থের প্রভাবে এ পরিবারের বিরুদ্ধে কথা বলার লোক খুব কম রয়েছে। কেউ কথা বললে নিজস্ব লাঠিয়াল বাহিনী ও মামলা হামলার মাধ্যমে শায়েস্তা করা হয় তাকে। স্থানীয় কাকাইলছেও চৌধুরী বাজারেও তাদের রয়েছে একছত্র প্রভাব। আর তাই এ বাজারে অবস্থিত নারী উদ্যোক্তাদের জন্য নির্মিত ৩টি পাকা ভবনের মার্কেট দেড় যুগ ধরে রয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিজবাহ উদ্দিন ভূঁইয়া ও তার ভাইয়ের দখলে। এ ছাড়া জনসাধারণের ব্যবহারের ১টি গণশৌচাগারও তালাবদ্ধ করে নিজেদের দখলে রেখেছে অবৈধ দখলদাররা। উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সঠিক করে বলতে পারছে না এ মার্কেট কার দখলে রয়েছে। এ সুযোগে নারীদের মার্কেটগুলো আওয়ামী লীগের সভাপতির দখলে চলে গেছে। নারীদের তৈরি পণ্যসামগ্রী দিয়ে বিপণন ও প্রদর্শন এবং তাদের আত্মনির্ভরশীল ও স্ব-উদ্যোগী করার লক্ষ্যে সরকার মহিলা মার্কেট নির্মাণ করে। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে প্রভাবশালীদের ঘৃণ্য চেষ্টায় সেগুলো এখন প্রভাবশালী মহলের হাতে। এ মার্কেটে নারীরা তাদের কার্যক্রম করবেন একথা বলার সাহস নেই উদ্যোক্তাদের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ‘বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলীয় পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’র আওতায় ২০০৮ সালে ৩টি শেড ও একটি ভবনে ৩টি ভবন নারী উদ্যোক্তাদের জন্য নির্মাণ করে। এরপর ১৬ বছর থেকেই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিজবাহ উদ্দিন ভূঁইয়া ও তার ভাই নুরুল হক ভূঁইয়া এলাকায় প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন।
সরজমিন কাকাইলছেও চৌধুরী বাজরে গিয়ে দেখা যায়, বাজারের লঞ্চ টার্মিনাল রোড সংলগ্ন ৩টি শেড ও নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ৩টি মার্কেট এবং তার সংলগ্ন দু’টি শৌচাগার রয়েছে। শেডগুলোতে চা স্টল, কাপড়ের দোকানসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ীর দখলে আছে। এর পাশেই নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ৩টি মার্কেট রয়েছে। একটিকে আনোয়ার মিয়া নামের এক ব্যবসায়ীর ধানের ব্যবসা, অপর দু’টিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিজবাহ উদ্দিন ভূঁইয়ার ভাতিজা এনামুল হক ভূঁইয়া সিমেন্টের ব্যবসা করছেন। এ ছাড়া দু’টি শৌচাগারের একটিতে তারা তালাবদ্ধ করে রেখেছেন। এলাকার জনসাধারণকে ব্যবহার করতে দেয়া হয় না কোনো শৌচাগার।
মার্কেটের আরেক দখলদার ধান ব্যবসায়ী আনোয়ার মিয়া জানান, রুমগুলো বর্তমানে ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মিজবাহ উদ্দিন ভূঁইয়ার তত্ত্বাবধানে আছে। ওনার ভাতিজা আছে দুইটার মধ্যে আর তিনি একটিতে ব্যবসা করছেন। চেয়ারম্যান আমাদেরকে এটা ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে কয়েকজন নারী উদ্যোক্তা জানান, মার্কেট নির্মাণের পর থেকে প্রভাবশালীরা দখল করে বসে আছে। তাদেরকে সরানোর ক্ষমতা কোনো নারী উদ্যোক্তার নেই। উদ্যোক্তারা যদি ব্যবসা করার সুযোগ পেতেন তারা আরও স্বাবলম্বী হতে পারতেন।
আজমীরীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও কাকাইলছেও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজবাহ উদ্দিন ভূঁইয়া মানবজমিনকে জানান, এসব দোকানপাট তিনি চেয়ারম্যান হওয়ার অনেক আগে থেকেই দখল হয়ে আছে। বিগত ১৫ বছর ধরে ১০/১২ জন দখলদার এখানে ব্যবসা করে আসছে। তিনি বলেন, আমার নিজের যে সম্পত্তি আছে সেগুলোই দেখভাল করার সময় পাই না। সরকারি জায়গা দখল করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। আর নারী উদ্যোক্তা আছে বা কোন জায়গা তাদের দরকার এমন কেউ কোনোদিন আমার কাছে আসেনি। আর আমি কোনো অনিয়ম করেছি কিনা তা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করলেই জানতে পারবেন। তিনি আরও বলেন, আমি ও আমার পরিবার কেমন ধরনের লোক তা এলাকার সবাই জানে। বর্তমানে আমাদের দলীয় অবস্থান খারাপ থাকায় কিছু লোক আমার মান সম্মান নষ্ট করতে এসব মিথ্যে অভিযোগ করছে।
Leave a Reply