মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ০৭:০৯ পূর্বাহ্ন

কাজে ফিরছেন চুনারুঘাটে চা শ্রমিকরা

কাজে ফিরছেন চুনারুঘাটে চা শ্রমিকরা

চুনারুঘাট প্রতিনিধি ॥ চুনারুঘাটের লস্করপুর ভ্যালীতে ন্যাশনাল চা কোম্পানির (এনটিসি) ৩টি ফাড়িসহ ৭টি বাগানে চা শ্রমিকরা আগামী শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) থেকে কাজে ফিরবেন। ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে দুই কিস্তিতে বকেয়া পরিশোধের সিদ্ধান্তে ভ্যালির সাড়ে ৩ হাজার চা শ্রমিক আগামী শুক্রবার থেকে কাজে ফিরছেন। চলতি বছরের ২২ আগস্ট থেকে ৬ সপ্তাহ মজুরি না পেয়ে কাজ বন্ধ করে দেয় শ্রমিকরা। প্রায় ৩ মাস ধরে রেশন ও মজুরি না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন এসব বাগানের শ্রমিকরা।
চা শ্রমিকদের দাবি ছিল- বকেয়া মজুরি দেওয়া ও শ্রমিকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রত্যাশা বাস্তবায়ন। এগুলোর আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে ন্যাশনাল চা কোম্পানির ১২টি বাগানের চা শ্রমিকরা কাজে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল।
তিনি জানান, গতকাল সোমবার শ্রীমঙ্গল শ্রম অধিদপ্তর কার্যালয়ে চা শ্রমিকদের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ও ন্যাশনাল চা কোম্পানির যৌথ বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল চা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহমুদ হাসান, এনটিসির মহাব্যবস্থাপক এমদাদুল হক, ডিডিএল নাহিদুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের (বাচাশ্রই) ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল, চা শ্রমিক নেতা রামভজন কৈরিসহ অনেকে। নিপেন পাল বলেন, চা শ্রমিক প্রতিনিধি, চা বাগান পরিচালনা প্রতিনিধি এবং সরকারি অধিদপ্তরের প্রতিনিধি এ তিনপক্ষের যৌথ বৈঠকে চা বাগানগুলো দ্রুত রান করানোর (চালু) প্রস্তাবটিকে সবাই সম্মতি দেন। শ্রমিকদেরও লস হচ্ছে আর বাগান কর্তৃপক্ষের তো হচ্ছেই। সর্বোপরি দেশের ক্ষতি হচ্ছে। এ দিকগুলো সার্বিকভাবে বিবেচনা করে সীমিত পরিমাণে শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি দেওয়ার পরের দিনই বাগান চালুর প্রতিশ্রুতি আসে। এক্ষেত্রে দুই সপ্তাহের বকেয়া মজুরি প্রায় ২ হাজার ২০০ টাকা করে বৃহস্পতিবারের মধ্যে শ্রমিকদের দেওয়া হবে। দুই সপ্তাহের মজুরি পেলেই শুক্রবার শ্রমিকরা কাজে যোগ দিবে।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে এ চা শ্রমিক নেতা বলেন, আগামী বৃহস্পতিবার শ্রমিকদের ২ সপ্তাহের বকেয়া মজুরি দেওয়া হবে। মাসিক বেতনধারী শ্রমিকদের ১ মাসের বেতন দেওয়া হবে। এখন থেকে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন নিয়মিত পরিশোধ করা হবে। বাগানের কর্মচারীদের ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে ১ মাসের বেতন দেওয়া হবে। এছাড়া বাগান বন্ধের দিনগুলোতে চা শ্রমিকদের রেশন কাটা হবে না।
বোনাস ও বার্ষিক ছুটির দিন গণনার ক্ষেত্রে বাগান বন্ধের দিনগুলো অনুপস্থিত দেখানো হবে না। এদিকে অবশিষ্ট বকেয়া মজুরি আগামী ২০২৫ সালের মার্চ এর মধ্যে পরিশোধ করা হবে। একইসঙ্গে ২০২৫ সালের ৭ এপ্রিলের মধ্যে প্রভিডেন্ট ফান্ডের বকেয়া চাঁদা পরিশোধ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের চা শ্রমিক ইউনিয়েনের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের আরও বেশি মজুরি দেওয়ার দাবি ছিল। কিন্তু বাগান কর্তৃপক্ষ তো দিতে পারছে না। শ্রমিকরা প্রায় ৩ মাস আন্দোলন করছেন। কেউ কেউ না খেয়ে ছিলেন। আবার খালি হাতে কাজে ফিরবে এটা তো অমানবিক। তাই আমাদের জোর দাবি ছিল কাজে ফেরার আগেই তাদের বকেয়া যতটুকু সম্ভব দিতে হবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত এসেছে। অন্তত খাওয়া-দাওয়া করে শ্রমিকরা কাজে ফিরতে পারবেন।
এদিকে ভ্যালির ৭টি বাগান বন্ধ থাকায় প্রায় ৩ মাসে ২০ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতির মধ্যে পড়েছে চা বাগানগুলো। এ অবস্থায় ভ্যালীতে চলতি বছর লক্ষমাত্রা অর্জন না হওয়ার পাশাপাশি লোকসানের দিকে যাচ্ছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved 2024 DailyBijoyerProtiddhoni
Design & Developed BY ThemesBazar.Com