মঙ্গলবার, ০১ Jul ২০২৫, ০৯:৩৬ পূর্বাহ্ন

চুনারুঘাটের জহুর আলীর খুনীদের চিহ্নিত করতে নাখোশ ওসি নূর আলম

চুনারুঘাটের জহুর আলীর খুনীদের চিহ্নিত করতে নাখোশ ওসি নূর আলম

॥ খুনীরা কি অধরাই থেকে যাবে!
স্টাফ রিপোর্টার ॥ চুনারুঘাটের জহুর আলী হত্যাকান্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। নালুয়া চা বাগানের পূর্ব টিলায় হত্যাকান্ডের শিকার ৬০ বছর বয়স্ক বৃদ্ধের হত্যাকান্ড ও টাকা লুটে নেয়ার ঘটনা এমনকি নিহতের মরদেহ ভারতের খোয়াই জেলার গৌর নগরে কিভাবে গেল তা এখনো চুনারুঘাট পুলিশ উদঘাটন করতে পারেনি। গত ৫ জানুয়ারী রাতে এই হত্যাকান্ড ঘটলেও প্রায় এক সপ্তাহেও চুনারুঘাট পুলিশ এর রহস্য উদঘাটন করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এ নিয়ে জনমনে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। সীমান্ত থানা চুনারুঘাটে দায়ীত্বশীল, কর্তব্য পরায়ন কোন ওসি না হলে উপজেলাবাসীর জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত সম্ভব নয়। একজন ফাঁড়ি ইনচার্জ এর অভিঞ্জতা নিয়ে চুনারুঘাট উপজেলার আইন শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখা কোনক্রমেই সম্ভব বলে মনে করেন না সচেতন মহল। অভিজ্ঞ, সৎ ন্যায়পরায়ণ, দায়িত্বশীল একজন পুলিশ কর্মকর্তাই চুনারুঘাটবাসীর জানমাল ইজ্জতের প্রতিবিধান করতে পারেন এমন প্রত্যাশাই সাধারণ মানুষের।
উল্লেখ্য, নিহত জহুর আলীর এলাকার লোকজন বলেছেন, জহুর আলীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে মরদেহ ভারতে ঠেলে দেয়া হয়েছে।
সোমবার ৬ জানুয়ারী সকালে গুইবিল সীমান্তের ১৯৬৮নং মেইন পিলারের ৫ ও ৬নং সাব পিলারের কাছে ত্রিপুরার গৌড়নগর এলাকা থেকে বিএসএফ এক বৃদ্ধের মরদেহ উদ্ধার করে খোয়াই থানা পুলিশের কাছে অজ্ঞাত হিসেবে হস্তান্তর করে। খোয়াই থানা পুলিশ সেই মরদেহ মর্গে পাঠায়। ফেইসবুকে বিষয়টি প্রকাশিত হলে তোলপাড় শুরু হয় এবং ত্রিপুরার খোয়াই হাসপাতালের মর্গে থাকা মরদেহটির একটি ছবি ফেইসবুকে প্রকাশিত হলে সেই মরদেহ বাংলাদেশী বৃদ্ধ জহুর আলীর বলে সনাক্ত করেন স্বজনরা। এরপর চুনারুঘাট থানার এসআই দেলোয়ার হোসেন ফেইসবুকের সূত্র ধরে গাজীপুর ইউনিয়নের ডুলনা গ্রামে গিয়ে মৃত ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত করেন। মৃত জহুর আলীর একমাত্র পুত্র অলি মিয়া জানান, তার বাবা ঢাকা বসুন্দরা সিটির সিটিএল কোম্পানীতে সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি গত শনিবার বাড়িতে আসেন। রবিবার বিকালে তিনি বাড়ি থেকে বের হন এবং সেই থেকে তিনি নিখোঁজ হন। তার বাবাকে কেউ খুন করেছে কিনা তা তিনি জানেন না। জহুর আলীর স্ত্রী সুফিয়া খাতুন বলেন, তার স্বামী যখন ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসেন তখন তার কাছে ১০/১২ টা নতুন লুঙ্গি ছিলো। তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়ে লুঙ্গির ব্যবসা করবেন বলে জানান। ঢাকা থেকে আসার পর স্বামীর কাছে ১০/১১ হাজার টাকা একটি পলিথিনে মুড়ানো ছিলো বলে জানান তিনি। সেই নতুন লুঙ্গি এবং টাকা সাথে নিয়ে তিনি রবিবার সন্ধ্যার পর বাড়ি থেকে বের হন। এরপর আর বাড়ি ফিরেন নি। স্ত্রী সুফিয়া বলেন, রবিবার রাত প্রায় ১২টার সময় এলাকার একজন লোক তাকে বলেছে, তার স্বামী অজ্ঞান হয়ে বাড়ির কাছেই একটি ধানী জমিতে পড়ে রয়েছেন। সেই খবর পেয়ে তিনিসহ তার আত্মীয়রা ঘটনাস্থলে গিয়ে জহুর আলীকে পাননি তবে তার পায়ের প্লাস্টিকের নীল রঙের স্যান্ডেল, মাফলার ও মোবাইল ফোন পড়ে থাকতে দেখেন এবং যে পলিথিনে টাকা মুড়ানো ছিলো সেটাও ছেড়া অবস্থায় দেখতে পান তিনি। ঘটনাস্থলের অনতিদূরে সাদা রঙের আরও এক জোড়া প্লাস্টিকের স্যান্ডেল উদ্ধার করা হয়। সেই সূত্র ধরে চুনারুঘাট থানার দারোগা দেলোয়ার হোসেন ডুলনা গ্রামে জহুর বাড়িতে আসেন এবং তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেন। তিনি দুই জোড়া স্যান্ডেল, মোবাইল ফোন ও টাকা মুড়ানো সেই পলিথিন আলামত হিসেবে জব্দ করে থানায় নিয়ে আসেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে বিজিবি ৫৫ ব্যাটালিয়ানের কমান্ডিং অফিসার লেঃ কর্নেল তানজিল এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, বিজিবি ইতোমধ্যেই খোয়াই থানা পুলিশ ও বিএসএফ এর সাথে যোগাযোগ করেছে এবং গতকাল বিকালে দুই দেশের আইন শৃংখলা বাহিনীর প্রয়োজনীয় কার্যাদি সম্পন্ন করে লাশ হন্তান্তর পক্রিয়া সম্পন্ন করে। লাশ ফেরত আনতে বিজিবি ও বিএসএফ’র মাঝে কয়েক দফা চিঠি চালাচালি হয়।
এদিকে জহুর আলী কি ভাবে সীমান্ত এলাকায় গেলেন, কি ভাবে কাঁটা তারের বেড়া অতিক্রম করলেন, কেনো গেলেন সেই রহস্য এখনও অন্ধকারে রয়ে গেছে। সাদা সেন্ডেলটি কার, জহুর আলীকে কিভাবে কাঁটাতারের ওপারে ঠেলে দেয়া হলো তা এখনও অস্পষ্ট। তবে মরদেহে গোসল দেয়ার সময় তার শরীরের নানান স্থানে নানান ধরনের আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে তবে ভারত থেকে ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে আসল রহস্য বের হবে বলে জানায় পুলিশ। অধিকতর তদন্ত মাধ্যমে জহুর আলীর খুনের রহস্য বের হবে এমনটাই মনে করেন সচেতন মহল।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved 2024 DailyBijoyerProtiddhoni
Design & Developed BY ThemesBazar.Com