নিজস্ব প্রতিনিধি ॥ ‘আমার ছেলেটা অনেক কষ্ট কইরা পড়তে ছিল। কয়দিন আগে ফোন কইয়া কইল- মা, চাকরি করুম, আর তোকে কষ্ট করতে হবে না। এখন সেই ছেলেটা আইলো না, আইলো লাশ।’ আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জগন্নাথ হলের রবীন্দ্র ভবনের ছাদ থেকে পড়ে নিহত সাঞ্জু বাড়াইকের মা অনিমা বাড়াইক। প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা চা-বাগানে কাজ করে সাঞ্জুর পড়াশোনার খরচ চালাচ্ছিলেন তিনি। সাঞ্জু বাড়াইক ঢাবির নৃবিজ্ঞান বিভাগে ২০২০-২১ বর্ষে পড়তেন। তার বাড়ি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায়। চার ভাইয়ের মধ্যে সাঞ্জু ছিল দ্বিতীয়। তার বড় ভাই পেশায় অটোরিকশা চালক। আর বাবা মনিরোদ বাড়াইক ‘গ্রাম পুলিশ’ হিসেবে কর্মরত। গত সোমবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে সাঞ্জুর মরদেহ উদ্ধার হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাৎক্ষণিক জানায়, হলের ছাদ থেকে পড়ে সাঞ্জুর মৃত্যু হয়েছে। সাঞ্জুর বাবা বলেন, ‘ছেলেটা কোনোদিন মন্দ পথে যায়নি। ওর স্বপ্ন ছিল অফিসার হবে, সমাজ বদলাবে। এখন সব স্বপ্ন শেষ।’ চা শ্রমিক পরিবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণ সাঞ্জুর মৃত্যুর খবরে মর্মাহত তার সহপাঠী-বন্ধু-শিক্ষকরা। স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বিজয় হাজরা বলেন, ‘ওই প্রথম আমাদের বাগান থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছিল। ছেলেটি ছিল আমাদের অহংকার।’ আরেক শিক্ষক সোহাগ মিয়া বলেন, ‘কোনো মেধাবী তরুণ যখন এভাবে ঝরে যায়, তখন দায় শুধু তার নয়, আমাদের সবার। সময় মতো যদি পাশে কেউ দাঁড়াত, হয়তো এ মৃত্যু দেখতে হতো না।’ বন্ধু শুভ রুদ্র বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে সাঞ্জু খুব চুপচাপ ছিল। কারও সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলত না। বুঝতে পারছিলাম, ওর ভেতরে কিছু একটা চলছে।’ জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. দেবাশীষ পাল বলেন, ‘সকালে আমাদের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা কাজ করতে এসে বিকট শব্দ পেয়ে এগিয়ে গিয়ে দেখেন এক ছাত্র পড়ে রয়েছে। পরে তাৎক্ষণিক তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
Leave a Reply